ভোলা প্রতিনিধি ॥ কখনও মাটি কাটার শ্রমিক আবার কখনও দিনমজুরের কাজ করে ছয় ছেলেকে লেখাপড়া করানোসহ সংসার চালিয়েছেন মো: মজিবল হক মোল্লা। নিজে না খেয়ে ছয় ছেলের মুখে খাবার তুলে দেয়া সেই বাবা আজ ছেলের হত্যা মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পুত্রবধূর মিথ্যা অপবাদের বোঝা সইতে না পেরে আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছেন। কথাগুলো বলার সময় কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন বৃদ্ধ মজিবল হক। ভোলার মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের চরফৈজুদ্দিন গ্রামের বাসিন্দা মো. মজিবল হক মোল্লা শনিবার সকালে ভোলার বাংলাস্কুল মোড়ে একটি হোটেলের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তিনি জানান, ছয় ছেলের মধ্যে মো. আলাউদ্দিন মোল্লাই একমাত্র শিক্ষিত হয়েছেন। তাকে অন্যের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার করে ও বাবার রেখে যাওয়া জমি বিক্রি করে ডাচবাংলা মোবাইল এজেন্ট ব্যাংকিং ও সার-কীটনাশকের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে দিয়েছেন স্থানীয় ফকিরহাট বাজারে। সেটা দিয়েই আলাউদ্দিন তার অন্য ভাইদেরকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সবকিছু ভালোমতোই চলছিল কিন্তু হঠাৎ ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর আলাউদ্দিন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার সময় রাতে নিজের ঘরের সামনে খুনিরা তাকে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনার পরের দিন সকালে আমার আরেক ছেলে মো. জাফর বাদী হয়ে মনপুরা থানায় একই গ্রামের মো. জয়নাল (৩৫), মো. আবু কালাম (৩৫), দোকানের কর্মচারী দিবাকর সরমা (৫৫) ও আরো ৬-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করে। ওই দিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহারভূক্ত আবু কালাম, দিবাকর সরমাসহ অজ্ঞাত আসামি মাকসুদ, শাহিন ও শামিমকে গ্রেফতার করে। আসামিদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র বাড়ির সামনের ডোবা থেকে উদ্ধার করে। পরে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসামিরা হত্যার দায় স্বীকার করে ও হত্যারকা-ের বর্ননা দিয়েছে বলে মনপুরা থানার সাবেক ওসি মো. ফোরকান আলী হাওলাদার আমাদের জানান। পরবর্তীতে ওই মামলা পিবিআই বরিশালে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়। পিবিআই বরিশাল তদন্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন মনপুরা থেকে আবুল কালাম ও রনিকে গ্রেফতার করে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, হত্যার তিন মাস পর আমার ছেলে মৃত আলাউদ্দিনের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রিতু ও তার বাবা আবুল কাসেমের সঙ্গে আসামি আবুল কালামের(এসএ) মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে আবুল কালাম (এসএ), মাকসুদ, শামিম, শাহিন ও রনিকে বাদ দেওয়ার একটি সমঝোতা হয়। বিষয়টি আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা জানতে শাহানজ আক্তার রিতুকে জিজ্ঞাস করলে সে আমার উপর চড়াও হয় এবং হুমকি দিতে থাকে। সে আলাউদ্দিন হত্যা মামলা থেকে আবুল কালাম (এসএ), মাকসুদ, শামিম, শাহিন ও রনিকে বাদ দেওয়ার জন্য আমাদের চাপ প্রয়োগ করে।
আমরা তার প্রস্তাবে রাজি না হলে আলাউদ্দিনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৬০-৭০ লাখ টাকা ছিল এবং কাগজের কার্টুন ভর্তি এসব টাকা আমার আরেক ছেলে জামাল হাতিয়ে নিয়েছে বলে মিথ্যা অভিযোগ করে সে। অথচ আমার ছেলে আলাউদ্দিনের এজেন্ট ব্যাংকের দোকানের টালি খাতার হিসাব নিকাশে পাওনা টাকার পরিমাণ প্রায় ৯১ লাখ টাকা এবং দেনার পরিমাণ ৮১ লাখ টাকা ছিল। আমার ছেলে আলাউদ্দিনের মৃত্যুর পর আমার ছেলের বউ শাহানাজ আক্তার রিতু ও আমার অন্যান্য ছেলেরা মিলে পাওনাদারদের নিকট থেকে উত্তোলন করে দেনাদারদের প্রায় ৫২ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বর্তমানে বাকি টাকার হিসাবসহ সকল টালি খাতা ও দোকানের চাবি আমার ছেলের বউ শাহানাজ আক্তার রিতুর কাছে আছে। তিনি জানান, শাহানাজ আক্তার রিতু ও তার বাবা আবুল কাসেম যখন কোনো ষড়যন্ত্র করেই আমাদের আটকাতে পারেনি তখন সে আলাউদ্দিন হত্যা মামলা থেকে আবুল কালাম (এসএ), মাকসুদ, শামিম, শাহিন ও রনিকে বাদ দিতে ও মামলাকে নষ্ট করার জন্য গত ৩ সেপ্টেম্বর মনপুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুরাতন মামলার তিন আসামি জয়নাল, আবু কালাম ও দিবাকরের সঙ্গে আমাকে ও আমার ছেলে জামাল, পুরাতন মামলার বাদী জাফর, মহসিন, মাইনুদ্দিন, সামসুদ্দিন ও মামলার প্রধান স্বাক্ষী শামিম মাস্টারকে আসামি করে নতুন করে একটি মামলা দায়ের করে। এছাড়াও মামলার বাদী ও সাক্ষীকে একের পর এক মিথ্যে হয়রানি করে যাচ্ছে। লোভি ছেলের বউ ও তার বাবার ষড়যন্ত্র থেকে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের বাঁচাতে এবং ছেলে হত্যার আসামিদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। মামলার বাদী মো. জাফর জানান, আমার ভাবি আমাকে মামলা উঠিয়ে নেয়ার জন্য অনেকবার বলেছেন। আমি রাজি না হলে ভাবি ও ভাবির বাবা আমাকে হুমকি দেন। আমি নাকি পরবর্তীতে পালানোর সময়ও পাব না। এ সময় সংবাদ সম্মেলনে মো. মজিবল হক মোল্লার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আলাউদ্দিন হত্যা মামলার বরিশাল পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তা মো. কবির হোসেন জানান, আমরা নতুন করো কোনো মামলার কাগজ পাইনি। পুরোতন মামলায় এখনও তদন্ত চলছে।
Leave a Reply